রহমত নিউজ 08 August, 2023 02:13 PM
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আবার একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। বিএনপি যেন নির্বাচনে যেতে না পারে সে চেষ্টা করা হচ্ছে। বিএনপির সব কার্যক্রমে বাধা দেওয়া হচ্ছে। সামনে নির্বাচন আছে বলে ভদ্রলোক হওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। কিন্তু বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। আমান উল্লাহ আমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ বিএনপির অনেক নেতাদের বিরুদ্ধে সাজাই প্রমাণ করে সরকার বেআইনি ও ফরমায়েশি রায়ের মাধ্যমে তাদের নীলনকশা বাস্তবায়ন করছে। সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট বা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট যাই হোক, এই আইনের বাতিল চায় বিএনপি। এ আইন মানুষের অধিকার, গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে। এটি জনগণের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া কিছু না। বিদেশিদের চাপে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) এর নাম পরিবর্তন করে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট করা হচ্ছে। জনগণকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে সরকার। মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান এবং তাঁর সহধর্মীনি ডাঃ জোবাইদা রহমান এর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার ফরমায়েসী রায় প্রদানে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। সভা মনে করে বর্তমান অবৈধ সরকার, বিচার বিভাগকে অবৈধ, অগণতান্ত্রিক ফ্যাসীবাদী শাসনকে স্থায়ী করার লক্ষে, গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমন করার সবচেয়ে বড় অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে। বিচার বিভাগের সকল স্তর গুলোকে দলীয় করনের মাধ্যমে উচ্চ আদালতে দেশের জনপ্রিয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্ব প্রদানকারী বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান, তাঁর সহধর্মীনি অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ডাঃ জোবাইদা রহমান, বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দুদক ও দলীয় পুলিশ কর্তৃক দায়ের কৃত মিথ্যা মামলার বেআইনী ফরমায়েসী রায়, নিম্ন আদালতের স্বেচ্ছাচারীতা, উচ্চ আদালতে ন্যয় বিচার থেকে বঞ্ছিত করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চলমান আন্দোলন দমন করার জন্য ন্যক্কার জনক ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সভা মনে করে সম্প্রতি সরকারের আজ্ঞাবহ দুদক দায়ের কৃত মিথ্যা মামলায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বিশেষ করে অরাজনৈতিক ব্যক্তি ডাঃ জোবাইদা রহমানের ফরমায়েসী রায় সেই সত্যই প্রমান করে। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য জনাব ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জনাব আমান উল্লাহ আমান এবং ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য লুৎফরজ্জামান বাবরসহ অসংখ্য রাজনৈতিক নেতা এর ফরমায়েসী রায়, নিম্ন আদালতে সাতক্ষীরা থেকে বারবার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য জনাব হাবিবুর রহমান হাবিব কে ৭০ বৎসর কারাদন্ড, পাবনা জেলা বিএনপি’র মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক কে এম আক্তারুজ্জামান, ঈশ^রদীর পৌর বিএনপি’র নেতা জাকারিয়া পিন্টু ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক পৌর মেয়র মোখলেসুর রহমান বাবলুসহ ৯ জনকে মৃত্যুদন্ড, ২৫ জন কে যাবৎজীবন ও ১৩ জনকে ১০ বৎসরের কারাদন্ড প্রদান করেছে। গতকাল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র ইসাহাক সরকারসহ ২৭ জনকে ২ বৎসর সাজা প্রদান, এই সত্য সন্দেহাতীত ভাবে প্রমান করে যে, সরকার অনৈতিক, অসাংবিধানিক, বেআইনী ফরমায়েসী রায় প্রদান করে বিরোধী রাজনীতিকে র্নিমূল করার নীল নকশা বাস্তবায়ন করছে। বিচার বিভাগে আওয়ামী রাজনীতির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের বিচারকের পদে নিয়োগ দিয়ে বিচার বিভাগকে সম্পূর্ন দলীয় করন করা হচ্ছে। সভায়, বিচারকদের পবিত্র আসনে যারা বসে আছেন তাদের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ডা. জোবায়দা রহমানাসহ সাজাপ্রাপ্ত সকল রাজনৈতিক নেতার রায় বাতিল ও সকল মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়।
তিনি আরো জানান, গণতন্ত্র পুনুরুদ্ধারের ১ দফা দাবীতে গত ২৮ জুলাই ২০২৩ইং তারিখে নয়া পল্টনে মহাসমাবেশ সফল করার জন্য বিএনপি যৌথ আন্দোলনে অংশ গ্রহণকারী রাজনৈতিক দলের সকল স্তরের নেতা-কর্মী ও সর্বস্তরের জনগণকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানানো হয়। সভা মনে করে এই মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে সরকারের পদত্যাগের দাবীতে আন্দোলন আরও বেগবান হয়েছে। পরের দিন ২৯ জুলাই ঢাকা মহানগরের প্রবেশ মুখে ঘোষিত কর্মসূচী পালনে জনগণ পুলিশের সহিংশ বাধার মুখেও ১ দফা দাবীর প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করেছে। সভায় জনগণকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানানো হয়। পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে আহত নেতা-কর্মীদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করা হয়। জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের ওপর নৃশংস অমানবিক আক্রমণ এর তীব্র নিন্দা জানানো হয়। একই সঙ্গে পুলিশ, গুলি, টিয়ার গ্যাস শেল, লাঠি চার্জ, জল কামান ব্যবহার করে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীকে বানচাল করে দেয়া, শত শত মানুষকে আহত করা গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা জানানো হয়। সভায় অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত সবাইকে নিঃশর্ত মুক্তি ও সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানানো হয়। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ১ দফা আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষে সংশ্লিষ্ট সকলকে সমন্বয় করে কর্মসূচী প্রস্তুতির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের পরিবর্তে সাইবার নিরাপত্তা আইনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। সভা মনে করে এটা নাম পরিবর্তন করে নিবর্তন মূলক আইন প্রণয়ন করার নামান্তর। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত বক্তব্য পরবর্তীতে প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।